ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া চুরির অপবাদে গ্রাম্য সালিশের ডাক দেন এলাকাবাসী, সালিশে না যাওয়ায় বাবা-ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গত সোমবার নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৬০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। মামলায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের নাওগাঁও দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গফুর (৫০) ও তাঁর ছেলে মেহেদী হাসানকে (১৫) কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে পরে সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে আজ সন্ধ্যায় মরদেহ বাড়িতে নেওয়ার পর, রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি বাবা-ছেলেকে দাফন করা হবে।
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকনুজ্জামান বলেন, সালিসে না যাওয়াকে কেন্দ্র করে বাড়িতে গিয়ে গণপিটুনি দিয়ে বাবা-ছেলেকে হত্যা করা হয়, মামলার এজাহারে সেটিই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনজন আসামিকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে জড়িত ব্যক্তিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন পলাশীহাটা গ্রামের মো. রিপন (৩২), নাওগাঁও গ্রামের মো. মোজাম্মেল হক (৬৫) ও এক কিশোর (১৩)।
নিহতের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, তাঁর স্বামী আবদুল গফুরের নিজের চাচাতো ভাই আবদুল মোতালেবের কাছে পাঁচ বছর আগে সাড়ে ৪৫ শতাংশ জমি বন্ধক দিয়েছিলেন। দুই লাখ টাকা জমি বন্ধক দিলেও মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আরও পাঁচ বছরের জন্য এক লাখ টাকা চান তাঁর স্বামী। কিন্তু টাকা ও জমি কিছুই দিতে চাইছিলেন না আবদুল মোতালেব। পরে তাঁর স্বামী অন্য জায়গায় জমি বন্ধক দিতে চাইলে তাতেও বাধা দেন। ওই অবস্থায় স্থানীয়ভাবে সালিসে বসে তিন মাস আগে এক লাখ টাকা দিলেও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন মোতালেব।
শিল্পী বেগম বলেন, ‘মেহেদী আমার স্বামীর প্রথম পক্ষের ছেলে। সে একটু বখাটেপনা করত। চার-পাঁচ দিন আগে আবদুল মোতালেবের ফিশারিজ থেকে দুটি তেলাপিয়া মাছ ধরায় ক্ষুব্ধ হয়ে বকাঝকা করে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। এর মধ্যে প্রতিবেশী বিদেশফেরত একজনের কিছু কাগজ ও মুঠোফোন চুরি হওয়ায় এর অপবাদ দেয় মেহেদীকে। এ নিয়ে সালিস বসালে আমার স্বামী ছেলেকে নিয়ে যায়নি। সে কারণে বাড়িতে এসে হামলা করে হত্যা করে।